- 26 April, 2025
- 0 Comment(s)
- 104 view(s)
- APDR
প্রেস বিবৃতি : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, পহেলগাঁও হত্যাকান্ডের দোষীদের শাস্তি চাই। যুদ্ধ জিগিরের বিরোধিতা করুন।
ASSOCIATION FOR PROTECTION OF DEMOCRATIC RIGHTS(APDR)
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি
১৮ মদন বড়াল লেন,
কলকাতা:৭০০০১২
প্রেস বিবৃতি
পহেলগাঁও হত্যাকান্ডের দোষীদের শাস্তি চাই।
কিন্তু যুদ্ধ কোন সমাধান নয়। যুদ্ধ জিগিরের বিরোধিতা করুন।
কাশ্মীরের পর্যটন ক্ষেত্র পহেলগাঁওতে ২৫ জন নিরপরাধ, নিরস্ত্র পর্যটক ও একজন কাশ্মিরি শ্রমজীবী মানুষের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডকে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নিহতরা ছাড়াও বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকলকে অবিলম্বে গ্রেফতার এবং আইনানুগ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের জন্য আমাদের গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা আরও দাবি জানাচ্ছি, নিহত ও আহত সকলের জন্য ভারত সরকারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে হবে।
একইসঙ্গে সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এত সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও এই হত্যাকান্ড ঘটলো কি করে - সরকারকে অবিলম্বে এবিষয়ে দেশবাসীর কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে। আগের পুলওয়ামা হত্যাকাণ্ডের মতো পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডও যাতে ধামাচাপা না পড়তে পারে আমরা সেজন্য দাবী জানাচ্ছি, সুপ্রিম কোর্টের কোন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে এই নারকীয় ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করানো হোক।
বিমুদ্রাকরণ, ৩৭০ ধারা বিলোপ, রাজ্যকে দু'টুকরো করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি, বিপুল সেনা পাঠিয়ে সমস্ত প্রতিবাদী কন্ঠকে জেলে পোরা, সংবাদ মাধ্যমকে পুরোপুরি সরকারি কব্জায় নিয়ে আসা, লাগাতার ইন্টারনেট বন্ধ রাখা - ভারত সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে দাবি করেছিল কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার এই দাবি করার পরেও এত বড় ঘটনা কিভাবে ঘটল, কেন ঘটলো জনসাধারণের সেটা জানা দরকার।
এত বড় হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে মানুষ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেভাবে সারাদেশে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, বহু জায়গায় তাদের উপর হামলা হচ্ছে, কাশ্মীরী ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল থেকে তাড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। এ ব্যাপারে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির তৎপর হওয়া দরকার, ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিশেষত লাগাতার বিদ্বেষ ছড়ানো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলিকে অবিলম্বে নিরস্ত করা দরকার। এব্যাপারে আমরা প্রেস কাউন্সিল ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ দাবি করছি।
এই প্রসঙ্গে আরও বলা দরকার, ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ জিগির তুলেছে তাও খুব উদ্বেগের। এর ফলে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারি দুষ্টচক্রের শাস্তি হবে কিনা জানা নেই কিন্তু পাকিস্তানের এবং ভারতের আপামর জনসাধারণ চরম দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হবেন। দু'টি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের যুদ্ধ কোথায় গিয়ে যে পৌঁছাবে কেউ তা জানে না। ভারত যেভাবে সিন্ধু চুক্তির মত আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত চুক্তি একতরফা বাতিল করে দিল তাও আপত্তিকর। পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ কৃষক এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন - যারা কোনোভাবেই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নন্। পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তাদের আকাশ পথ বন্ধ করা, সিমলা চুক্তি বাতিল করা ইত্যাদির মাধ্যমে যে নৈরাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে তার অভিঘাতও সহ্য করতে হবে দুই দেশের নিরাপরাধ সাধারণ মানুষকেই। আমরা তাই এই পথ থেকে ভারত ও পাকিস্থান উভয় দেশের সরকারকে সরে আসার দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই, সর্বোচ্চ স্তরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে আলোচনার মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। তাতেও না মিটলে রাষ্ট্রসংঘের মত আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যস্থতায় বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করা হোক। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। তাই যুদ্ধ জিগির বন্ধ হোক।
কাশ্মীরের আপামর জনসাধারণ আর সকলের মত এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রবল ধিক্কারে সোচ্চার হয়েছে। অথচ কাশ্মীরে জঙ্গী খোঁজার নামে অসংখ্য কাশ্মীরীকে হেফাজতে আটক করা হয়েছে।কর্ডন ও সার্চের নামে জনজীবনে তীব্র আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এসব বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে আমাদের তাই আবেদন, এই জঘন্য হত্যাকান্ডে জড়িত দোষীদের শাস্তির দাবীতে সোচ্চার হোন। কিন্তু সাধারণ মুসলমান ও কাশ্মীরীদের প্রতি কোন বিরূপ আচরণের বিরোধিতা করুন। যুদ্ধ বা যুদ্ধ জিগিরেরও বিরোধিতা করুন। এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় বা সত্যিকারের যুদ্ধ হলে সাধারণ ভারতবাসীর মানবাধিকারও ভয়ংকর ভাবে বিপন্ন হবে। মত প্রকাশের অধিকার সহ আপনার সমস্ত অধিকার যুদ্ধের দোহাই দিয়ে কেড়ে নেমে রাষ্ট্র। তাই আসুন এই হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতার সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধেরও বিরোধিতা করি।
রুটি, রুজি ও অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন যাতে কোনভাবেই গড়ে না ওঠে তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রংবেরংয়ের বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং তথাকথিত হিন্দুত্ববাদীরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্বেষ ও বিভেদের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যেও যেন মৌলবাদ জায়গা করে নিতে না পারে সে ব্যাপারেও বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের একতা বজায় রাখতেই হবে।
এই কঠিন সময় আমাদের সকলের কাছে সুচিন্তিত পদক্ষেপ দাবি করছে।
রঞ্জিত শূর,
সাধারণ সম্পাদক,
এপিডিআর।
২৬/০৪/২৫