• 18 April, 2025
  • 0 Comment(s)
  • 73 view(s)
  • APDR

প্রেস বিবৃতি - ১৭ এপ্রিল ২০২৫: মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে



ASSOCIATION FOR PROTECTION OF DEMOCRATIC RIGHTS (APDR)
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি
১৮ মদন বড়াল লেন
কলকাতা:৭০০০১২


প্রেস বিবৃতি


গত ৮ এপ্রিল ২০২৫, ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ইমাম মোয়াজ্জিন সংগঠন ও বিভিন্ন স্থানীয় গণ-সংগঠনের একটি যৌথ সভায় এপিডিআর, মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক রাহুল চক্রবর্তী আমন্ত্রিত বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার পি ডব্লু ডি মাঠে সভাটি হয়। সভায় রাহুল চক্রবর্তী তার বক্তব্যে বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক জনবিক্ষোভের সাফল্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের বাংলাদেশের থেকে শিখতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সাফল্য পেতে হলে বাংলাদেশের মতো সবাইকে নিজ নিজ দল ও মতাদর্শের উর্ধে উঠে এক হয়ে লড়াই করতে হবে। তাঁর পেশ করা বক্তব্য থেকে একাংশ কেটে নিয়ে, অন্যান্য বক্তার কিছু বক্তব্যের সঙ্গে ক্যাপ্সুল বানিয়ে বিকৃতভাবে এপিডিআর এর বিরুদ্ধে ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা - সব ভাষায় দেশজুড়ে প্রচার শুরু হয়। চরম বিদ্বেষমূলক প্রচার। আরএসএস- বিজেপি প্রভাবিত গদি মিডিয়ার একাংশ কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে এপিডিআর এবং জেলা সম্পাদক রাহুল চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে এই মিথ্যা বিদ্বেষ মূলক প্রচার শুরু করেছে। সামাজিক মাধ্যম সহ সর্বত্র এই প্রচার চলেছে।
আসলে এপিডিআর গত কয়েক মাস ধরে মুর্শিদাবাদ জেলায় ওবিসি সংরক্ষণ বাতিল এবং ওয়াকফ সংশোধনী আইন করে মুসলমানদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রচার আন্দোলন সংগঠিত করেছে। শুধু তাই নয় এর আগে বেলডাঙায় কার্তিক পূজার সময় আলোর কারসাজি করে আল্লার নামে কু'কথা বলে দাঙ্গা লাগানোর যে চেষ্টা হয়েছিল তাও এপিডিআর ব্যাপক জনসমক্ষে প্রচার করেছিল। এপিডিআর, মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি, খুব দ্রত তথ্যানুসন্ধান করে সেই রিপোর্ট জনসম্মুখে নিয়ে এসে ব্যাপক প্রচার করেছিল। জনৈক মহারাজ ও তার অনুগামীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। বহরমপুর বইমেলায় বাংলাদেশের বই রাখাকে কেন্দ্র করে বিজেপি-আরএসএস অনুগামীরা বইমেলায় যে অসভ্যতা করেছিল এপিডিআর তার বিরুদ্ধেও জনমত সংগঠিত করেছিল। এনআইএ দ্বারা নানা রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কর্মরত মুর্শিদাবাদের যুবকদের সন্ত্রাসবাদী বলে তুলে নিয়ে যাওয়া, আসাম পুলিশ কর্তৃক মুর্শিদাবাদের মানুষদের সন্ত্রাসবাদী বলে আদালতে না তুলে আসামে নিয়ে চলে যাওয়া, নিরীহ মানুষদের সন্ত্রাসবাদী দেগে আতঙ্ক সৃষ্টি করা, মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলে ভিন রাজ্যে হেনস্তার বিরুদ্ধে, বিএসএফের অত্যাচারের বিরুদ্ধে, গঙ্গা ভাঙ্গনে সরকারি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে, হেফাজতে অত্যাচার, হত্যা - এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে লাগাতার কর্মসূচি নিয়েছে এপিডিআর । মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এপিডিআরের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাও তথাকথিত হিন্দুত্ববাদীদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। বেলডাঙ্গার ঘটনার পরেও আরএসএস অনুগামীরা সমাজমাধ্যমে এপিডিআর কর্মীদের এবং নির্দিষ্ট ভাবে রাহুল চক্রবর্তীকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। এর কিছুদিন আগেই বহরমপুরে এপিডিআরের পথসভার পরে আর এস এস অনুগামীরা ওই জায়গায় গঙ্গাজল ও দুধ ঢেলে শুদ্ধ করার নামে অসভ্যতা করে সে ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছিল। আগেও একবার পুলিশ নিয়ে এসে ধাক্কাধাক্কি করে এপিডিআরের সভা বন্ধ করে দিয়েছিল।
এ পি ডি আর এবং সহযোগী গণসংগঠনগুলির ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে
সাম্প্রতিক সভা গুলোতে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হচ্ছিল। বহু অমুসলিম মানুষও এই প্রতিবাদে সামিল হচ্ছিল। কান্দিতে এপিডিআর এর ডাকে সাম্প্রতিক এক মিছিলে কয়েক হাজার মানুষ সামিল হয়েছিলেন। নাগরিক সমাজের একটি সংগঠন ও তার বন্ধু সংগঠনগুলি ডাকে ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের সাড়া দেখে প্রমাদ গোনে আর এস এস বিজেপির অনুগামীরা। জেলাজুড়ে এপিডিআর এর সক্রিয়তা তাদের মেরুকরণের রাজনীতির বাধা। তাই গোদি মিডিয়াকে ব্যবহার করে এপিডিআর সম্বন্ধে মানুষকে ভুল বোঝাতে চাইছে। এপিডিআর এবং জেলা সম্পাদক তথা সংগঠনের রাজ্য সহ-সম্পাদক রাহুল চক্রর্বতীকে আলাদা করে বদনাম করতে চাইছে।

আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চাই এপিডিআর কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বা কোন ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি করে না। এপিডিআর মনে করে ওয়াকফ আইনের সংশোধনী আইন মুসলমানদের অর্থনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকারের উপর আক্রমণ। এপিডিআর তাই এই সংশোধনের বিরোধিতা করে। কিন্তু এপিডিআর একথাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাতে চায় ধর্ম পরিচয়ের কারণে হিন্দু বা অন্য কোন ধর্মের মানুষের উপর সামান্যতম আক্রমণকেও এপিডিআর তীব্রভাবে নিন্দা জানায়। অন্য ধর্মের মানুষের ঘরবাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুর, অত্যাচার সমস্ত কিছুকেই এপিডিআর দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা জানায়। আমরা মনে করি, কোন ধর্মের একজন মানুষকেও যদি ঘরবাড়ি ছাড়তে হয় তার দায় রাজ্য সরকারের। প্রত্যেকের জান-মালের দায়িত্ব, প্রত্যেককে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও রাজ্য সরকারের। কোন রাজনৈতিক দল যদি চক্রান্ত করে সে চক্রান্ত ব্যর্থ করে সবাইকে নিরাপদে রাখাও রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। সেটা পালন না হলে সেই দায়ও রাজ্য সরকারের উপরেই বর্তায়। কারণ সংবিধান অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। যারাই করুক বা যারাই পেছনে থাকুক আমরা চাই মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক গোলযোগে সমস্ত অপরাধীকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু আমরা মনে করি এই অশান্তির কারণ ওয়ারফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়, বরং ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনকে নষ্ট করার বা বদনাম করাই ছিল এই হিংসা ও অশান্তির লক্ষ্য। চাকরি হারা শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে নজর ঘোরাতে পুলিশকে কোথাও নিস্ক্রিয় রেখে, কোথায়ও অতি সক্রিয় করে এই গোলমালকে বাড়তে দিয়েছে রাজ্য সরকার ও শাসকদল। উভয় কাজেই এই সব অপশক্তি সাময়িকভাবে সফলও হয়েছে। এপিডিআর এই হিংসাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে। এর সাম্প্রদায়িক রূপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রথমে আন্দোলনকারী, পরে সাধারণ মানুষের উপরে যেভাবে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালানো হয়েছে - নির্বিচারে গ্রেপ্তার করে, বিএসএফ নামিয়ে, সিআরপিএফ নামিয়ে, পুলিশ দিয়ে, গুলি চালিয়ে, লাঠি চালিয়ে, বাড়ি বাড়ি ঢুকে অত্যাচার করে যে ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস নামিয়ে আনা হয়েছিল তারও এপিডিআর নিন্দা জানাচ্ছে। আমরা তাই সমগ্র ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। চটি পরা বিএসএফ, প্রতিবেশি দেশ থেকে দুস্কৃতি ঢোকানো, অজানা অচেনাদের আগুন লাগানো সহ যে মাত্রার অভিযোগ এবারে সামনে এসেছে তার যদি সত্য উদঘাটন করতে হয় তবে হাইকোর্টের কোনো বিচারপতিকে দিয়ে সমগ্র ঘটনার তদন্ত করা দরকার। ধুলিয়ানের হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষেরই অভিযোগ ঘরবাড়ি ভাঙচুর, আগুন দেওয়া, মন্দির মসজিদের ওপর আঘাত, মিছিলে ইট মারা, বাবা ও ছেলে দুজনকে হত্যা, মুসলমানরা তেড়ে আসছে বলে মিথ্যে কথা রটিয়ে বিশেষত হিন্দু মহিলা ও বাচ্চাদের বিএসএফ এর সাহায্যে মালদায় আশ্রয় নিতে বাধ্য করা - সবই করেছে অপরিচিত লোকেরা। ঘর বাড়িতে যখন আগুন দেওয়া হয় তখন পুলিশকে বারবার ফোন করলেও তারা আসে না। এলাকার অনেকেই মনে করেন ঐসব লোকের ধর্ম পরিচয় যাই-ই হোক ঐ অপরিচিত লোকগুলো কোন না কোন রাজনৈতিক দলের ভাড়া করা গুন্ডাবাহিনী। বিচার বিভাগীয় তদন্ত ছাড়া সত্য কিভাবে উদঘাটিত হবে!
বিচার বিভাগীয় তদন্তের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আবারও ওয়াকফ সংশোধনী আইন সম্পূর্ণভাবে বাতিলের দাবি জানাচ্ছি এবং রাজ্যের সমস্ত মানুষকে এই দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।

রঞ্জিত শূর,
সাধারণ সম্পাদক,
এপিডিআর।
১৭/০৪/২৫


Eternal Vigilance is the Price of Liberty
All Rights Reserved APDR
About us | Contact Us